আমরা
জল যখন জমিয়া কঠিন হয় তখন সে লোহার পাইপকেও ফাটাইয়া ফেলে। আজ আমরা জলের মতো তরল আছি, যন্ত্রীর ইচ্ছামতো যন্ত্রের তাড়নায় লোহার কলের মধ্যে শত শত শাখাপ্রশাখায় ধাবিত হইতেছি - জমাট বাঁধিবার শক্তি জন্মিলেই লোহার বাঁধনকে হার মানিতেই হইবে।
আমরা ও ক্ষমতা
আমাদের শক্তি নাই, আমরা পারি না, এই মোহই সকলের চেয়ে ভয়ংকর মোহ। যে ব্যক্তি ক্ষমতাপ্রয়োগের অধিকার পায় নাই সে আপনার শক্তির স্বাদ জানে না; সে নিজেই নিজের পরম শত্রু। সে জানে যে আমি অক্ষম এবং এইরূপ জানাই তাহার দারুন দুর্বলতার কারণ।
আমাদের অবস্থা
আমাদের পক্ষে অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, আমাদের সন্দেহেরও অন্ত নাই, আমাদের নির্ভরেরও সীমা নাই। বিশ্বাসও করিব না, আবার প্রার্থনা করিব। যদি জিজ্ঞাসা করা যায় এমন করিয়া সময় নষ্ট করিতেছ কেন, তবে উত্তর পাইবে, এক দলের দয়া না যদি হয় তো আরেক দলের দয়া হইতে পারে। প্রাতঃকালে যদি অনুগ্রহ না পাওয়া যায় তো, যথেষ্ট অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিলে সন্ধ্যাকালে অনুগ্রহ পাওয়া যাইতে পারে। রাজা তো আমাদের একটি নয়, এই জন্য বারবার সহস্রবার তাড়া খাইলেও আমাদের আশা কোনক্রমেই মরিতে চায় না - এমনি আমাদের মুশকিল হইয়াছে।
আমাদের দেব-দেবতা
আমরা যদি আমাদেরই প্রবৃত্তি আমাদেরই আকৃতি দিয়া দেবতা গড়ি তবে তাহার মধ্যে মুক্তি কোনখানে? যদি তাহাকে স্নান করাই, খাওয়াই, মশারিতে শোয়াই, এমনকি, তাহার জন্য নটী নিযুক্ত করিয়া রাখি তবে তাহার ফল কী হয়? তবে নিজের প্রবৃত্তিকেই দেবতা করিয়া পূজা করা হয়। আমাদের লোভ আমাদের হিংসা আমাদের ক্ষুদ্রতাকে দেবতারূপে অমর করিয়া রাখি। এই কারনেই কালীকে দস্যু আপন দস্যুবৃত্তির সহায় বলিয়া জ্ঞান করে, মিথ্যা শপথকারী আদালতে জয়লাভের জন্য পশু মানত করে, এমনকি, যে সকল অন্যায়-অবিচার-দুষ্কর্ম মনুষ্যলোকে গর্হিত বলিয়া খ্যাত, দেবচরিত্র তাহাও অনিন্দনীয় বলিয়া স্থান পায়।
সৌজন্যেঃ অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।