[১৯২৬ সালের জানুয়ারির ৩ তারিখে কবি সপরিবার কৃষ্ণনগর এসেছিলেন, এনেছিলেন হেমন্তকুমার সরকার। কবিকে কেন এনেছিলেন তিনি? শুধুই বন্ধু বলে? প্রতিভাবান কবি বলে? মাস ছয়-সাতেক গোলাপট্টিতে থেকে কবি গ্রেস কটেজে আসেন। ঠিক কবে আসেন তিনি? জুলাই, নাকি আগস্ট? কেনই বা এলেন এই বাড়িতে? ভীষণ দারিদ্র্যের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নির্জন এক প্রান্তে? অনেক কিছুই আমরা জানি না, জানাও যায় না। এখান-ওখান থেকে জোগাড় করা তথ্য আর তার সাথে খানিক অনুমান মিশিয়ে টুকরো কথার কিছু দৃশ্য সাজিয়ে তোলার চেষ্টা এই কাহিনীতে।]
কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪০ সালে তোলা আলোকচিত্র।
পর্ব - ২২
আওয়াজ উঠলো - অ্যাটেনশন!
অমনি ভরা প্ল্যাটফর্মে তিনজন মিলিটারী উর্দিধারীর তিনজোড়া বুট একসঙ্গে খটাস্ আওয়াজ করে সটান স্যালুটের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লো। মুখে ধ্বনিত হলো - স্বাগত কমরেডস!
কৃষ্ণনগর স্টেশনে সদ্য ট্রেন থেকে নেমেই মুজফফর আহমদ, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কুতুবউদ্দিন সহ সবাই এরকম অপ্রত্যাশিত অভ্যর্থনায় চমকিত হয়ে উঠলেন। শামসুদ্দীন হুসেন ঝোলাটা বাম কাঁধে সামলে পালটা স্যালুটের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লেন - সেলাম কমরেডস!
আব্দুল হালিম আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন নজরুলকে। এই তো আমাদের হাবিলদার কবি! আবার স্বমহিমায়!
বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনে আগত যাত্রীতেই প্ল্যাটফর্ম পরিপূর্ণ। কুষ্টিয়া মেহেরপুরের লোকজন দর্শনা-বগুলা হয়ে, আবার যশোর খুলনার মানুষও বনগাঁ হয়ে রাণাঘাটে জড়ো হয়েছিলেন। ১০টার লালগোলায় সবাই মিলে কৃষ্ণনগর।
শহরের জনাদশেক ছাত্র-যুবাকে নজরুল এর মধ্যেই মিলিটারি কায়দায় লেফটরাইট আর কুচকাওয়াজ করিয়ে ভলান্টিয়ার ট্রেনিং দিয়ে ফেলেছেন। মঘা অর্থাৎ প্রমোদ সেনগুপ্ত তাঁর প্রধান পাণ্ডা। পুলিশী ইউনিফর্মের ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে। ক'দিন সকালে টাউন হলের মাঠে ওদের ট্রেনিং দেখতেই লোক জড়ো হয়ে যেত। মঘা আর গোবিন্দকে নিয়ে চমকে দেবার প্ল্যান করেই নজরুল কাশেম আলির গাড়ি নিয়ে স্টেশনে হাজির হয়ে গিয়েছেন। কুতুবউদ্দিন জড়িয়ে ধরে বললেন - কাজী ভাই, তোমার চেহারায় আগের ছাপ অনেকটা ফিরে এসেছে দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। আমার জন্যেই তো বসিরহাটে গিয়ে যত গন্ডগোল বাধালে!
মুজফফর আহমদ বললেন, ভাই কুতুব, তুমি কিংবা অন্য কেউ, বসিরহাট হোক কিংবা মাঝেরহাট -- নজরুল গণ্ডগোল ঠিকই বাধিয়ে আসত! জেলে গিয়ে খামোখা না খেয়ে তাজা শরীরটা নষ্ট করার জন্য কে বলেছিল? যার যা স্বভাব!
মুজফফর আহমদ সচরাচর রঙ্গ-রসিকতার কথা কম বলেন। তাঁর মন্তব্যে প্ল্যাটফর্মে একটা উচ্চ হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়ল।
দুপুরের পরে সম্মেলন আরম্ভ। নজরুল সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাশেম আলির গাড়িতে গোলাপট্টি রওনা দিলেন। মঘা ও গোবিন্দ মিলে অন্য প্রতিনিধিদের নিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের দিকে চলে গেল। সেখানে ডেলিগেটদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
হেমন্ত সরকারের বাসভবনেই নেতৃবৃন্দের জমায়েত। শেষবেলার আলোচনা, প্রস্তুতি খসড়া করে নেওয়া এবং দ্বিপ্রারিক আহার। নীচতলায় দু’খানা ঘরও খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম ও রাত্রিবাসের জন্য। শুধু মুজফফর আহমদ আজ নজরুলের অতিথি।
প্রাথমিক আলোচনা অল্পেই সেরে নেওয়া হলো। আহ্বায়ক হিসেবে হেমন্তদা প্রথমে মাইক ধরবেন। সভাপতি হিসেবে নরেশ গুপ্তের নাম ঘোষণা, অতিথি পরিচয় এবং বরণ পর্ব হয়ে গেলে অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি হিসেবে স্বাগত জানাবেন এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ। সেখানেই আজকের সভার গুরুত্ব জাতীয় কংগ্রেসের সাথে কতটা দূরত্ব বজায় রাখা হবে সে বিষয়ে ডেলিগেটদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হবে। তারা ভাবুক, প্রস্তুত থাকুক। ওদিক থেকেই প্রস্তাবগুলো উঠে আসুক, অন্তত সমর্থন। এরপরে নরেশ গুপ্ত সম্মেলনের মূল বক্তব্য পেশ করবেন। নরেশবাবু লম্বা বক্তৃতা লিখে এনেছেন। সেটা পড়ে শোনাতে উদ্যত হলে হেমন্ত সরকার বললেন - নরেশদা, বিস্তারিত পাঠ আপনি সভাতেই করবেন। মূল পয়েন্টগুলো একবার শুধু শুনিয়ে রাখুন। স্নানখাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিক সবাই।
কথাবার্তা চলতে থাকল। নজরুল মুজফফর আহমদকে নিয়ে পথে বেরিয়ে এলেন। একই চৌহদ্দির ভিতর দুখানা বাড়ির শেষ অংশে নজরুলের আবাস। বারান্দার ধাপে পা দিতে না দিতেই গিরিবালা দেবী বেরিয়ে এলেন - যেন তাঁদের জন্য দরজাতেই অপেক্ষমান ছিলেন।
'এসো বাবা, এসো। কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম। শরীর তো আরও রোগা হয়ে গিয়েছে! বোসো'।
'জেলে কি আর আদর-যত্ন করে রাখবে মাসিমা! তবে আপনাদের খবরাখবর সব পেতাম। তখন থেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকতাম কবে আপনাদের সাথে দেখা হবে, আদৌ এ জীবনে দেখা হবে কিনা।
- সে কী কথা? দেখা হবে না কেন?
- না মাসিমা, জেলের ভিতরেই বড়ো রকম অসুখ দেখা দিয়েছিল। শরীর ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছিল। নিজেও ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম। ডাক্তাররা কী বলল, জেল কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই জেল থেকে ছেড়ে দিল। তারপরে বেশ কয়েক মাস আলমোড়া পাহাড়ে ছিলাম।
- আমার কিন্তু বহরমপুর জেল থেকে বেরিয়ে ওজন বেড়েই গিয়েছিল। নজরুল মজা করে যোগ দিলেন কথায়।
- আপনার কথা আলাদা। সাদা সাহেবদের চটিয়েছেন বিলকুল, কিন্তু আপনার মতো সুরসিক কবি গায়ক মানুষ যেখানেই যাবেন সেখানেই আপনার গুণমুগ্ধ জুটে যাবে, জেলের ভিতরেও আদর-যত্নের অভাব হবে না। আর কানপুর জেলে তো আমাদের কয়েকজনকে অন্য কয়েদিরা আলাদা করে দেখতে আসত - ভালো করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত। ওদের ধারণা ছিল কমিউনিস্টরা বোধহয় ঠিক মানুষের মতো নয়, দৈত্য-দানব কিংবা জংলী ধরণের কেউ!
মুজফফর আহমদের কথার ঢঙে সবাই হেসে কুটোপাটা। এর ফাঁকেই দোলনের প্রবেশ ঘটেছে। বলতে গেলে সেই ছোটোবেলায় কান্দিরপাড়ে দু-এক ঝলক দেখা গুরুগম্ভীর মানুষটির আগমন বার্তায় ভালো লাগার পাশাপাশি দোলনের বুকের ভিতর একটা চাপবোধও ছিল। উনি নজরুলের অন্য বন্ধুদের মতো নন, একটা অভিভাবক সুলভ গাম্ভীর্য। এতোদিন বাদে এইরকম একটা হাসিখুশি পরিবেশে দেখে মুহূর্তে দোলনের বুকের ভার নেমে গেল। কোনো কথা বলে মাথায় কাপড়টা টেনে মুজফফর আহমদকে প্রণাম করে নিল। শশব্যস্ত মুজফফর দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, থাক থাক বৌমা। আপনাদের দেখার জন্য সেই কবে থেকে অপেক্ষায় আছি!
- আপনি কি আমাকেও আপনি আজ্ঞে করবেন? নিজের অজান্তেই দোলন কখন সপ্রতিভ হয়ে উঠেছে। সেটা মুজফফরও লক্ষ্য করলেন। পাঁচ বছর আগে কুমিল্লায় দেখা কিশোরীটিকে দিব্যি মনে আছে। কতই বা বয়স? দশ কি এগারো হবে। কিন্তু তখনই চোখেমুখে বেশ সপ্রতিভ। বাড়ির কচিকাঁচাদের মধ্যে বড়ো বলে হয়ত ওই বয়সেই চেহারায় একটা পরিণত চঞ্চলতা ছিল। কিন্তু এর বেশি মনে রাখার মতো কিছু চোখে পড়েনি। সেই কিশোরী যে নজরুলের মতো এক বিরাট হৃদয়কে জয় করে বসবে - এরকম ভাবনা সেদিন কল্পনাতেও আসেনি। অবশ্য নজরুল কবি মানুষ, তাঁর দেখবার চোখ, তাঁর অনুভূতির জগৎটাই আলাদা হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
- কী বলব, ওটা আমার একটা বদভ্যাস। সহসা কাউকে তুমি বলতে পারিনা, যেটা কাজী সাহেব দিব্যি পারেন, অতি সহজে। সেই গুণ আমার নেই। না না, তোমাকে আর আপনি আজ্ঞে করব না। তবে যাই বলো, সেই পাঁচ বছর আগে দেখা মেয়েটির সাথে এখনকার দোলনের অনেক তফাত।
- সেতো হবেই! তখনকার বালিকা এখন রীতিমতো গৃহিণী। নজরুল রসিকতা বললেন।
গিরিবালা দেবী তাড়া লাগালেন। খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এরপর আবার সম্মেলনের তাড়া আসবে। ভিতরের বারান্দায় মাদুর পাতা হয়েছে। সিঙ্গিমাছের ঝোল, টক দিয়ে মৌরলা আর ন'টে শাকের চচ্চড়ি খুব আয়েশ করে খেলেন মুজফফর।
- বহুদিন পরে এরকম তৃপ্তি করে খেলাম মাসিমা। মনে হলো যেন আমাদের সন্দীপের বাড়ির রান্না খাচ্ছি। জেলের ভাত, মেসের ভাত আর শিয়ালদা হোটেলের তেলপোড়া মাছভাজা খেয়ে খেয়ে মুখ পচে গিয়েছে।
আহারাদি সেরে যেটুকু সময় মুজফফর আহমদ গিরিবালা দেবীর সাথেই কথা বলে কাটালেন। তিনিও চাইছিলেন। বিবাহ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে মেয়েকে নিয়ে কী দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন গেছে - সে যন্ত্রণার কাহিনী একমাত্র মুজফফর আহমদকেই বলা যায়। তাছাড়া গিরিবালা দেবীর ধারণা - নুরুকে কিছুটা শাসনের মধ্যে আনতে পারলে সেটা একমাত্র মুজফফর আহমদের পক্ষেই সম্ভব। তড়িঘড়ি করে একরকম গোপনে মসজিদবাড়ি লেনে বিয়ের ব্যবস্থা, হুগলিতে অতি কষ্টে বাসার জোগাড়, আত্মীয় স্বজনদের দুঃখদায়ক বিরূপতা, বসিরহাটে গিয়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়া, দোলনের পুত্রহারার শোক - মুজফফর আহমদ জেলের বাইরে থাকলে হয়ত তাদের সবার জীবনটাই অন্যরকম হতে পারত, নুরুকে অন্তত দরকারি সময়ে কিছু বুদ্ধি-পরামর্শ, কিছু সতর্ক তিনি করতে পারতেন। এরকম একটা বিখ্যাত অথচ সংসার-বিমুখ ভীষণ খামখেয়ালি জামাইয়ের সংসারে থাকা শুধু নয়, হাল ধরে থাকা --- শুধু মেয়েটার জীবনের দিকে তাকিয়ে। নজরুলের বন্ধুবান্ধবের অভাব নাই, কিন্তু সেই ক’বছর আগে কান্দিরপাড়ে দেখা থেকে গিরিবালা দেবীর মনে হয়েছে - এসব কথা মুজফফর আহমদকেই বলা যায়।
বেলা তিনটে থেকে সভা শুরু। ঘন্টাখানেক আগে থেকেই নজরুল তাগাদা দিলেন - টাউন হলে যেতে হবে। সোনাপট্টির ভিতর দিয়ে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে টাউন হলে গিয়ে পৌঁছালেন। মঘার নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই পুলিশের খাকি পোষাকে সজ্জিত স্বেচ্ছাসেবকরা ভিতরে বাইরে অতিথিদের সামলাচ্ছে। প্রত্যেকের হাতে একটি করে লাল গোলাপ তুলে দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে হলের চেয়ার প্রায় ভর্তি হতে চলেছে। মঞ্চে ইতিমধ্যে অতিথি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আসন নিয়েছেন হেমন্ত কুমার সরকার। খাকি ইউনিফর্ম পরা গোবিন্দ মাঝে মাঝে মাইক টেস্টিং এর সাথে প্রাসঙ্গিক ঘোষণা করে যাচ্ছিল। ঠিক তিনটেয় হেমন্ত সরকার সূচনা কথা দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সভার কার্য শুরু করে দিলেন। আজকের মুখ্য আলোচ্য বিষয়াদি, কারা কারা বক্তব্য রাখবেন, আগামীকাল পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য শেষে সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে ইত্যাদি সবই জানিয়ে দিলেন। এরই ফাঁকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম উদবোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সেকথাও জানিয়ে দিলেন। দর্শকাসন থেকে তুমুল করতালি শোনা গেল। মঞ্চের বামপাশে টেবিলের উপর একটি হারমোনিয়াম। আজ বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে কৃষকরা জেগে উঠছে। যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের খাবার জোগান দেয় - তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের উদ্দেশ্যেই আজ আমার গান নিবেদন করছি - বলে নজরুল ভরাট গলায় শুরু করলেন - ওঠরে চাষী ধর কষে লাঙল! প্রথম লাইন দুবার গাইতেই তুমুল হর্ষধ্বনি! নজরুল গেয়ে চললেন -
"আমরা মরতে আছি, ভাল করেই মর্ব এবার চল্।।
মোদের উঠান-ভরা শস্য ছিল হাস্য-ভরা দেশ
ঐ বৈশ্য দেশের দস্যু এসে লাঞ্ছনার নাই শেষ,
ও ভাই লক্ষ হাতে টানছে তারা লক্ষ্মী মায়ের কেশ,
আজ মা’র কাঁদনে লোনা হ’ল সাত সাগরের জল।।"
বেশ দীর্ঘ গান। সম্মেলন উপলক্ষে মাসখানেক আগেই রচনা করেছিলেন গানটি। লাঙল পত্রিকায় ইতিমধ্যে ছাপাও হয়েছে, সুতরাং বেশ কিছু মানুষের মনেও থেকে গিয়েছে গানের অনেক বাণী।
নজরুল গেয়ে চলেছেন। হলভর্তি মানুষ শান্ত, মাথা দোলাচ্ছেন, কখনো তাল মিলিয়ে তালি দিচ্ছেন।
"...ও ভাই জোঁকের মতন শুষ্ছে রক্ত, কাড়ছে থালার ভাত,
মোর বুকের কাছে মরছে খোকা, নাই ক’ আমার হাত।
আজ সতী মেয়ের বসন কেড়ে খেলছে খেলা খল্।।
ও ভাই আমরা মায়ের খাঁটি ছেলে দূর্বাদল-শ্যাম,
আর মোদের রূপেই ছড়িয়ে আছেন রাবণ-অরি রাম।
ঐ হালের ফলায় শষ্য উঠে, সীতা তাঁরি নাম,
আজ হ’র্ছে রাবণ সেই সীতারে – সেই মাঠের ফসল।।
ও ভাই আমরা শহীদ, মাঠের মক্কায় কোরবানী দিই জান্।
আর সেই খুনে যে ফলছে ফসল, হর্ছে তা’ শয়তান।
আমরা যাই কোথা ভাই, ঘরে আগুন বাইরে যে তুফান!
আজ চারদিক হতে ঘিরে মারে এজিদ রাজার দল্।।
আজ জাগ্রে কিষাণ! সব তো গেছে কিসের বা আর ভয়?
এই ক্ষুধার জোরেই করব এবার সুধার জগৎ জয়।
ঐ বিশ্বজয়ী দস্যুরাজার হয়কে করব নয়,
ওরে দেখবে এবার সভ্য জগৎ চাষার কত বল্।।"
শেষ লাইনটা নজরুল জোরালো কণ্ঠে বারবার গাইতে থাকলেন, হলের ভিতরেও বহু শ্রোতা সঙ্গে গাইতে থাকলেন। গান তো নয় যেন স্লোগানে মুখরিত সভা - ওরে দেখবে এবার সভ্য জগৎ চাষার কত বল!
ততক্ষণে চেয়ার ভর্তি হয়ে হলের দুপাশের ফাঁকা জায়গাগুলোতে মানুষ বসে পড়ছেন। মঘারা সুচারুভাবে তাদের সামাল দিয়ে চলেছে। গান শেষ হলে এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমদ প্রথাগত ভাবে স্বাগত জানাতে উঠে বললেন - আসাম ও ত্রিপুরা প্রদেশ সহ বঙ্গের দূর দূরান্ত থেকে আগত সুধী প্রতিনিধিবৃন্দ! কবিবর কাজী নজরুল ইসলামের এই উদবোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমেই আজকের প্রজা সম্মিলনের মর্মকথা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। কৃষকেরাই দেশের প্রাণ, কিন্তু সেই প্রাণশক্তিই দিনকে দিন শোষিত নিপীড়িত। তাদের ভিতর থেকেই জাগরণ ঘটতে হবে, ঘটাতে হবে। এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, বক্তব্য এবং প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরবেন সম্মেলনের সভাপতি শ্রীযুক্ত নরেশচন্দ্র গুপ্ত মহাশয়।
(ক্রমশ)
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।