আমেরিকায় জাদুবিদ্যা (১৭৩৪-১৮৭৫)
"সম্পূর্ণ সান্ধ্যকালীন প্রদর্শনীর স্বর্ণযুগ"
অ্যাডিলেড হারম্যান এবং লিও হারম্যান
অ্যাডিলেড হারম্যান
তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর, অ্যাডিলেড হারম্যান তাঁর ভাইপো লিও হারম্যান-কে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্কে আসতে বলেন, যাতে তাঁরা একসঙ্গে ম্যাজিক শো চালিয়ে যেতে পারেন। লিও ইউরোপে পারফর্ম করছিলেন এবং তাঁর চেহারা আলেকজান্ডার হারম্যানের মতো ছিল। যদিও তিনি তাঁর কাকার অনন্য পরিবেশন দক্ষতার অভাব অনুভব করতেন, তবুও আমেরিকান দর্শকরা তাঁকে স্বাগত জানায়।
লিও হারম্যান
তবে, অ্যাডিলেড এবং লিওনের মধ্যে মানসিক পার্থক্যের কারণে তারা মাত্র তিন বছর পর আলাদা হয়ে যান। লিও পরে নিজেকে "হারম্যান দ্য গ্রেট" বলে প্রচার করতে শুরু করেন, যা অ্যাডিলেডকে অসন্তুষ্ট করে। লিও ১৯০৯ সালে মারা যান।
আলেকজান্ডার হারম্যান
অন্যদিকে, অ্যাডিলেড হারম্যান বছরের পর বছর ধরে ম্যাজিক পারফর্ম চালিয়ে যান। বিখ্যাত জাদুকর হ্যারি কেলার তাঁকে চিঠিতে লেখেন: "আপনার অসাধারণ সফলতার জন্য অভিনন্দন। আপনার অসাধারণ পারফরম্যান্স আমার প্রত্যাশার থেকেও ভালো ছিল। বিশেষ করে, আপনি বিলিয়ার্ড বলের মাধ্যমে যেভাবে হাতের কারসাজি করেন, তা আমি কখনও দেখিনি। আপনি সত্যিই পরিশ্রমী ও সাহসী একজন মহিলা, এবং এই বিশ্ব অবশ্যই আপনাকে সম্মান জানাবে।"
অ্যাডিলেড হারম্যান ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত ম্যাজিক শো করেছিলেন এবং অবসর নেওয়ার পর নিউ ইয়র্কে বসবাস করেন। ১৯৩২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। হারম্যান পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে এক শতাব্দীরও বেশি সময় জাদু জগতে রাজত্ব করেছে।
জন নেভিল মাস্কেলিন এবং ব্রিটিশ ম্যাজিক দৃশ্য
জন নেভিল মাস্কেলিন
ইংল্যান্ডে, একই সময়ে মাস্কেলিন পরিবার ব্রিটিশ ম্যাজিক দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। জন নেভিল মাস্কেলিন (John Nevil Maskelyne), এই পরিবার এই জাদু ঐতিহ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তিনি এক বুদ্ধিজীবী পরিবারের বংশধর, যাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে একজন 'অ্যাস্ট্রোনোমার রয়্যাল' (রাজকীয় জ্যোতির্বিদ) ছিলেন।
রবার্ট হুডিনের মতোই, মাস্কেলিন তরুণ বয়সে ঘড়ি নির্মাণের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত চিন্তাভাবনার কারণেই তিনি আধ্যাত্মিকতাবাদী এবং তাঁদের সমালোচকদের দ্বন্দ্বের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন এবং পেশাদার জাদুতে প্রবেশ করেন।
তিনি ড্যাভেনপোর্ট ভাইদের "আত্মা আহ্বান" ভেলকির গোপন রহস্য ফাঁস করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, ডার্ক ক্যাবিনেটের ভেতরে তারা আসলে নিজেদের হাত মুক্ত করে বিভিন্ন রহস্যময় কার্যকলাপ করতেন, যা তারা "আত্মার শক্তি" বলে দাবি করতেন।
জাদু ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়
জন নেভিল মাস্কেলিন ছিলেন একজন শৌখিন জাদুকর। একসময় তিনি এবং তাঁর বন্ধু জর্জ আলফ্রেড কুক লন্ডনে একটি শো শুরু করেন, যেখানে তাঁরা ড্যাভেনপোর্ট ভ্রাতৃদ্বয়ের "অলৌকিক" কৌশলগুলো পুনরায় পরিবেশন করতেন। এই শো থেকেই মাস্কেলিন ও কুকের জনপ্রিয় ক্যারিয়ার শুরু হয়।
১৮৭৩ সালে মাস্কেলিন লন্ডনের পিকাডিলিতে একটি থিয়েটার ভাড়া নেন, যেখানে আলেকজান্ডার হারম্যান তিন বছর ধরে পারফর্ম করেছিলেন। সেখানে "মিশরীয় হল" নামে একটি জাদু প্রদর্শনী শুরু হয়, যা দ্রুতই ব্রিটিশ সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে।
মাস্কেলিন ছিলেন এক উদ্ভাবনী শক্তির জাদুকর। তিনিই প্রথম এমন এক লেভিটেশন (বাতাসে ভাসমান) কৌশল দেখান, যেখানে এক মহিলাকে মাঝ-আকাশে ভাসিয়ে রাখা হতো এবং তার চারপাশে একটি রিং ঘোরানো যেত। আরেকটি চমকপ্রদ কৌশলে তিনি নিজেকে (আসলে একটি পুতুল, যা দেখতে তার মতোই ছিল) কালো তারের সাহায্যে থিয়েটারের ছাদের দিকে উড়িয়ে নিয়ে যেতেন।
তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা কিছু মেকানিক্যাল পুতুলও তৈরি করেছিলেন, যা দর্শকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করত।
১৯০২ সালে মাস্কেলিন লন্ডনে সেন্ট জর্জ হল নামে একটি নতুন থিয়েটার খোলেন, যেখানে "মিশরীয় হল"-এর ঐতিহ্য আরও তিন দশক ধরে অব্যাহত ছিল। তার পুরোনো সহকারী কুক অবসর নেন এবং তার প্রধান সহযোগী হন ডেভিড ডেভান্ট, যিনি ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা জাদুকর ছিলেন।
ডেভান্ট ছিলেন অসাধারণ এক অভিনয়শিল্পী, প্রতিভাবান উদ্ভাবক এবং চতুর ব্যবসায়ী। তিনি মাস্কেলিনের ছেলে নেভিল মাস্কেলিনের সঙ্গে "আওয়ার ম্যাজিক" নামে একটি বই লেখেন, যেখানে জাদুর নানান কৌশল ও শৈল্পিক উপস্থাপনার নীতিমালা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ডেভান্ট ১৯১৯ সালে মঞ্চ থেকে অবসর নেন। এর দু’বছর আগে, ১৯১৭ সালে জন নেভিল মাস্কেলিন মারা যান। তবে তাঁর সন্তানরা - নেভিল, ক্লাইভ, জ্যাসপার এবং নোয়েল - ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত সেন্ট জর্জ হলে জাদু প্রদর্শনী চালিয়ে যান।
(ক্রমশ)