প্রত্যেক মানুষের একেকটা গোটা বাল্যকাল থাকে। তার বর্ণ গন্ধ মোহময়তা এক এক রকম। কারো সাথে কারো মেলে না। মহাকাল কথিত এই ঋতু প্রত্যেকের কাছে তার আকর্ষণ এক এক প্রকার। এক এক রকম তার মহৎঘটা। কেহ স্বর্ণচাঁপা বর্ণের পলাশ দেখে আত্মহারা। কেহ শুধু বহন করতে করতে কয়েক বসন্ত কাবার করে দেয়। কেহ আবার মালা গাঁথবে গাঁথবে করে পেরে ওঠে না। যদিবা হলো কাকে বা পরাবে। মানুষ পেল তো মনের মানুষ পেল কই। তাও যদিওবা কিঞ্চিৎ ঘটে সেলফি নেওয়া হল কই। না তুমি সোস্যাল মিডিয়া বোঝো, না বোঝো ইউটিউবার। তখন তো শুধু দূত আর পত্র মাধ্যম। অথবা পশুপাখির আচার আচরণ বুঝে কর্মক্ষণ নির্ধারণ। খনাকে স্মরণ করে ধান গাছ বেল গাছ আজ্জানো।
বর্ষাকাল এলে আমার এক অরাজনৈতিক বাল্যকাল মনে ভেসে ওঠে। যেন গভীর চিন্তার তলদেশ থেকে সোনার থালায় ভেসে ওঠে হাজার অতীতের ঘনঘটা। আর কি দ্যুতি। ঢাউস এক যুগ্ম সংসারে বেড়ে ওঠা। ষোল জনের সংসারে বেড়ে উঠেও অভিভাবকহীন। তবে সন্ধ্যায় হ্যারিকেন যেন আমাদের অভিভাবক। তার আলোয় ঢুলুনি অবধারিত। তখন সেই মায়াবী আলোয় ঢুলতে থাকলে পা টিপে টিপে মা'কে যেন জানান দেয়।
অমন আহ্লাদী ফাঁকিবাজি দেখে তার বেশ হিংসে হয়। এরপর পিঠে পড়ে একপাউন্ড ওজনের মা'য়ের দু'চারটে ঢিপ ঢিপ। ভাদরের তাল পিঠে পড়বেই পড়বে। এমন এক সন্ধ্যায় রূপসী পিসতুতো দিদির অবন ঠাকুরের 'বাপ্পাদিত্য' পাঠ শোনা।
অথবা রবি ঠাকুরের "মনেরে আজ কহ যে ভালো মন্দ..." সারা বাল্যকালটাই ঠাকুর পরিবার হজম করে দিল। হ্যাজাকের আলোয় রবীন্দ্র জয়ন্তীতে, "এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল ধর..."
অন্যদের সাথে 'দ্বার' কখন 'ধর' হল কে আর দেখতে যাচ্ছে। রেখাপিসির টানাটানা চোখের প্যা-পোঁ হারমোনিয়ামে এক অরাজনৈতিক ঋতু আমাদের আক্ষরিক অর্থে রবীন্দ্র অনুসারী করে তুলছে এটা ঠিক।
গত শতকের সাতের দশক। নকশাল কংসাল সব একাকার। বাবু জগজীবন আর সিদ্ধার্থ একাকার। যৌবন আসবে কিন্তু তার ধরতাইটা টেরই পাবো না।মধ্যরাতে ভূকম্পন হলে দিদি জড়িয়ে ধরে বলত আমাকে জড়িয়ে থাক না হলে খাট থেকে পড়ে চিৎপটাং।
আমাদের গোয়াল ছিল তবে ধবলি গাই ছিল না। চার চারটে বলদের আখড়া। না জানি ঠাকুরদা গাই এনেও টেঁকাতে পারেনি। সকালে হাম্বা হাম্বা। বিকেলে হাম্বা হাম্বা। আমাদের সন্ধ্যার সহজ পাঠের মধ্যে হ্যারিকেনটাও যেন হাম্বা হাম্বা ডাক ছাড়ে।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।