আমেরিকায় জাদুবিদ্যা (১৭৩৪-১৮৭৫)
"সম্পূর্ণ সান্ধ্যকালীন প্রদর্শনীর স্বর্ণযুগ"
হ্যারি কেলার: একজন কিংবদন্তি জাদুকর
এখন আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৭০-এর দশকে, মাস্কেলিন ও কুকের শুরুর সময়ে, যেখানে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এক কিংবদন্তি জাদুকর - হ্যারি কেলার।
তার আসল নাম ছিল হ্যারি কেলার এবং তিনি ১৮৪৯ সালে পেনসিলভানিয়ার এরি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার মা মারা গেলে তিনি বাড়ি ছেড়ে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় খবরের কাগজ বিক্রি করে জীবনযাপন করতেন। পরে এক দয়ালু ব্যক্তি তাকে নিউইয়র্কের উত্তর অংশে নিয়ে যান এবং সেখানেই তিনি জাদুর প্রতি আকৃষ্ট হন।
কৈশোরে তিনি এক ভ্রাম্যমাণ জাদুকর "ফকির অব আভা" (আইজাইয়া এইচ. হিউজেস)-এর সাথে ছয় বছর কাজ করেন। এখান থেকেই তিনি জাদুর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি জন হেনরি অ্যান্ডারসন জুনিয়র ও ড্যাভেনপোর্ট ব্রাদার্সের সঙ্গে যুক্ত হন।
জাদুর পথ চলায় সংগ্রাম
কিন্তু ড্যাভেনপোর্ট ব্রাদার্স এতটাই কঠোর ছিলেন যে কেলার ও তার সঙ্গী উইলিয়াম কে তাদের দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর তারা নিজেদের জাদু প্রদর্শনী শুরু করেন, যেখানে কেলার একটি সিয়ান্স (আত্মাদের সাথে যোগাযোগ) এবং বিভিন্ন জাদু পরিবেশন করতেন।
তারা প্রথমে কিউবা ও মেক্সিকো সফর করেন এবং অবাক হয়ে দেখেন যে লাতিন দর্শকরা তাদের শো-তে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং তাদের ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপক হয়ে ওঠেন।
এরপর কেলার মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় বিশাল সফর শুরু করেন। তিনি স্প্যানিশ ভাষা শেখেন এবং পশ্চিম উপকূল থেকে দক্ষিণ মেরুর ম্যাগেলান প্রণালী হয়ে পূর্ব উপকূল ধরে ব্রাজিলে পৌঁছান।
বিপদের মুখে কেলার
ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় কেলার এক জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হন এবং তার সাথে থাকা ২০,০০০ ডলার নগদ অর্থ ও সব যন্ত্রপাতি হারান। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন, যেখানে বুয়াতিয়ের দে কোল্টার "ভ্যানিশিং বার্ডকেজ" (অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পাখির খাঁচা)-এর একটি কপি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এরপর তিনি আবার যাত্রা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার দিকে। তখন তিনি লক্ষ্য করেন, তার নাম রবার্ট হেলারের নামে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তাই তিনি তার নামের বানান পরিবর্তন করে "Keller" থেকে "Kellar" করেন।
হাওয়ার্ড থার্সটনের উত্থান
১৯০৮ সালের মে মাসে বাল্টিমোর শহরের দেয়ালে নতুন পোস্টার দেখা যায়, যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে এক কিংবদন্তির বিদায় ঘনিয়ে এসেছে।
হ্যারি কেলার যখন অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন হাওয়ার্ড থার্সটন নামক এক জাদুকর তার স্থান নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। থার্সটন ইতিমধ্যেই একজন দক্ষ তাসের জাদুকর ও কৌশলী বিনোদনশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জাদুর জগতে তখন এক প্রচলিত প্রথা ছিল - যে জাদুকর নতুন কোনো অসাধারণ কৌশল দেখাবেন, অন্য জাদুকররা তা অনুকরণ করে নিজেদের বলে দাবি করবেন। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই তীব্র ছিল যে একবার একজন জাদুকর অন্যের কৌশল প্রকাশ্যে ফাঁস করে দেন!
মাস্কেলিনের তৈরি করা বিখ্যাত "বাটারফ্লাই ইল্যুশন" (যেখানে একজন সুন্দরী মেয়েকে উধাও করে দেওয়া হতো) সেই সময় বেশ আলোচিত হয়েছিল।
কেলার ও মাস্কেলিনের লেভিটেশন
১৯০৪ সালে কেলার মাস্কেলিনের বিখ্যাত লেভিটেশন কৌশল তার শো-তে যুক্ত করেন। তবে এই কৌশলের আসল পরিকল্পনা তিনি পেয়েছিলেন জার্মান জাদুকর পল ভালাডনের কাছ থেকে।
এটি ছিল এমন এক লেভিটেশন যেখানে একজন মহিলাকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা হতো এবং তার চারপাশে একটি রিং চালিয়ে প্রমাণ করা হতো যে কোনো তার বা কাঠামো তাকে ধরে রাখেনি।
কেলার ছিলেন নিখুঁত পারফর্মার। তিনি প্রতিটি কৌশলের প্রতিটি ছোটখাটো দিক নিখুঁতভাবে অনুশীলন করতেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে - একটি ভালো জাদু পরিবেশনার জন্য শুধু কৌশল জানাই যথেষ্ট নয়, বরং সেটি উপস্থাপনের দক্ষতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(ক্রমশ)
চিত্রঋণঃ লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে।