স্থানীয় খবর

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র উদ্যোগে মহাসমারোহে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ পালিত হয় বিগত ১৫ই এপ্রিল, মঙ্গলবার, সন্ধ্যা ৬টা থেকে করুণাময়ী খেলার মাঠে।
স্বাগত ভাষণে 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র চেয়ারম্যান সুদীপ ধর সংগঠনের সম্বৎসরের কার্যকলাপের বিস্তৃত বিবরণ দেন।
উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন চন্দনা বসু। এরপর আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করে শিশুশিল্পী অধিরাজ দত্ত। বাংলার সংস্কৃতি ও সংগীতকে ভালোবেসে গান গাইতে ওঠেন সুদূর মাঙ্গালোরবাসী জেনিফার লোবো। তার গান সকলের মন ছুঁয়ে যায়।
শিশুশিল্পী রিসিমা গুহের গান দর্শকদের মন জয় করে নেয়। পঞ্চম বর্ষীয় শিশুদের গান ও আবৃত্তির চমৎকার অনুষ্ঠান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে। অংশগ্রহণকারী শিশুশিল্পীদের নাম যথাক্রমে বনত্রী মন্ডল, শ্রীয়া সিনহা, রীতায়ন মন্ডল। প্রবীণ আবৃত্তিকার ইলা রায়ের নিবেদন অত্যন্ত উপভোগ্য হয়। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন তপন ধর এবং রচনা পাঠ করে শোনান প্রবীণ বাচিক শিল্পী চুয়া সেনগুপ্ত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ৯৪ বছরের অনিন্দ্য সেনের আবৃত্তি। তারপর ছিল খোয়াই এর পরিবেশন একটি নৃত্য গীতি আলেখ্য। শিল্পীরা ছিলেন অমিয়া চক্রবর্তী, চন্দনা বসু ও সুস্মিতা চ্যাটার্জি। দর্শকদের তুমুল করতালি ধ্বনি তাদের ভালোলাগাকে জানিয়ে দেয়। তারপর ছিল চোখ ধাঁধানো দ্বৈত নৃত্যানুষ্ঠান। শিল্পীরা হলেন অঙ্কিতা ঘোষ ও তানিয়া সুর। এখানেও করতালি কম পরেনি।
পরের অনুষ্ঠান ছিল ইন্দিরা ব্যানার্জির পরিকল্পনা ও পরিচালনায় আনন্দম গোষ্ঠীর গীতি আলেখ্য। শিল্পীরা হলেন রীতা বোস, শ্বেতা ঘোষ, স্বর্ণালী ভট্টাচার্য ও শিউলি আদিত্য। এদের অনুষ্ঠান ছিল মনকাড়া। পরের অনুষ্ঠান ছিল চৈতি রায়ের পরিচালনায় প্যাসন গোষ্ঠীর সমবেত সঙ্গীত। এই অনুষ্ঠানও উচ্চমানের হয়েছিল। শেষ অনুষ্ঠান ছিল কল্লোল ঘোষের পরিচালনায় সংলাপ গোষ্ঠীর শ্রুতিনাটক। অংশগ্রহণে কল্লোল ঘোষ, শ্বেতা ঘোষ ও নীতা বনিক। এই অনুষ্ঠানও দর্শকমনে রেখাপাত করে। আবহ সঙ্গীতে ছিলেন হারমোনিয়মে ইন্দিরা ব্যানার্জি, তবলায় বিশ্বজিত মিত্র। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সুবীর বসু। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন অমিয়া চক্রবর্তী।












-
শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসব

সংবাদদাতা - সমীরণ ভৌমিকঃ বিগত ইংরেজির ২৬শে মার্চ ২০২৫ বুধবার থেকে ৩০ শে মার্চ রবিবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার, ডেবরা থানার তুড়িয়া, ৪ নম্বর ক্যানেল বাজার পার্শ্ববর্তী ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসবের ২২ তম বর্ষের শুভারম্ভ। পশ্চিমবাংলার নদীয়া জেলার, নবদ্বীপ ধামের শ্রী চৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু শুধুমাত্র ওই জেলায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। কৃষ্ণ প্রেমের লীলা সারা দেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি প্রেমের আলো, ঈশ্বর প্রেমের আলো মানুষের মধ্যে জ্বেলে দিয়েছিলেন। জীবে প্রেম ছিল তার মূল সুর।
ডেবরা থানার, তুড়িয়া, ৪ নম্বর ক্যানেল বাজার এই বছর তাদের ২২ তম বর্ষে 'শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসব' পদার্পন করল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার, ডেবরা ব্লকের, এই শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসব একটি বড় ধরনের আধ্যাত্মিক ভগবৎ চেতনার মেলা। পাঁচ দিন ধরে বহু ভক্ত সমাগমের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ আধ্যাত্মিক তীর্থ ভূমিতে অর্থাৎ 'মিনি বৃন্দাবনে' পরিণত হয়।
বিগত ২৬ শে মার্চ ২০২৫ বুধবার, বিকাল ৪ টায় মঙ্গলদীপ প্রোজ্জ্বলনের মাধ্যমে মেলার শুভসূচনা হয়। বিকাল ৪:৩০ টায় শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও কীর্তন সহযোগে পথ পরিক্রমা, পাঁচ ঘটিকায় শঙ্খধ্বনি ও হরি ধ্বনি সহকারে ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন হয়। পতাকা উত্তোলন করেন পূজ্যপাদ অনিল কুমার চক্রবর্তী মহাশয় (রাধামোহনপুর)। সন্ধ্যা ৬:৩০ ঘটিকায় স্বর্গীয় মদনমোহন ভূঁইয়া মঞ্চে উদ্বোধন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মঞ্চদাতা ছিলেন ডিঙ্গল গ্রাম নিবাসী মাননীয় শংকর কুমার ভূঁইয়া মহাশয় (প্রধান শিক্ষক) দনীচক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূজ্যপাদ অনিল কুমার চক্রবর্তী মহাশয়। তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চে তার মুখনিঃসৃত সুললিত ভগবৎ তত্ত্বের কথা, ভক্ত সমাগমে উপস্থাপিত করেন। উপস্থিত ছিলেন সমীরণ ভৌমিক (প্রাবন্ধিক)। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একখানা আধ্যাত্মিক ছোট্ট কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে মেলায় উপস্থিত ভক্তদের সামনে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কথা "তোরে হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না। ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর তো পাবোনা"। সেইসঙ্গে এই কলিযুগের প্রেমের ঠাকুর, প্রাণের ঠাকুর, অবতার বরিষ্ঠ ভগবান শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণদেবের কথা, জগৎ জননী মা সারদার কথা, বিশ্ব মহামানব স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শের কথা তুলে ধরেন উপস্থিত ভগবৎ প্রেমী দর্শকদের সামনে।
উপস্থিত ছিলেন মেলার একনিষ্ঠ কর্মী বাদল সেন মহাশয়। তিনি গুটি গুটি করে এগিয়ে চলা এই দীর্ঘ ২২ বছরের চলমান 'শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসব' মেলার সম্বন্ধে বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্য রাখেন ওই মেলার অন্যতম প্রাণপুরুষ ও একনিষ্ঠ সদস্য, এলাকার গুণী শিক্ষক দুলাল চক্রবর্তী মহাশয়। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর গৌরাঙ্গ মেলা চালিয়ে নিতে যে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, অর্থ কষ্টের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছেন এবং আজও অটুট রেখেছেন সেই সম্বন্ধে একটি বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন। সবার শেষে সমাপ্তি ভাষণ দেন উক্ত মঞ্চের সভাপতি শংকর কুমার ভূঁইয়া মহাশয়। রাত্রি ৭:৩০ টায় 'নৃত্য মন্দির ডান্স একাডেমি' তাদের আড়াই ঘণ্টার অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মন জয় করে নেন। রাত্রি ১০ টায় শুভ অধিবাস কীর্তন পরিবেশন করেন 'সত্যসাই কীর্তন সম্প্রদায়' (খড়গপুর)।
পরের দিন অর্থাৎ ২৭ শে মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টায় মূল মঞ্চে শুরু হয় ৭২ ঘণ্টা ব্যাপী নাম যজ্ঞ। পরিবেশন করেন 'সত্য সাই কীর্তন সম্প্রদায়'- খড়গপুর। উক্ত দিন সকাল ৯ টায় আরম্ভ হয় গীতা পাঠ। বেলা ১১ টায় মঞ্চে ভাষ্যকারের কিছু কথা, অনুষ্ঠান ঘোষণা এবং দাতা গনের নাম প্রচার। এদিন বিকাল ৪ টায় রামায়ণ গান পরিবেশন করেন বেতার ও দূরদর্শন শিল্পী দেবদুলাল আচার্য। সন্ধ্যায় লীলা কীর্তন পরিবেশন করেন 'গৌরগোপাল সম্প্রদায়'। গায়িকা রিয়া রাই কিশোরী (কলিকাতা)।
২৮ শে মার্চ শুক্রবার সকাল ৯ টায় শুরু হয় গীতাপাঠ। পাঠক নিমাই চন্দ্র জানা (সবং)। সকাল ১০:৩০ টায় ভক্তিগীতি ও লোকগীতি পরিবেশিত হয়।বিকাল ৩ টায় ভাগবৎ পাঠ। সন্ধ্যা ৭ টায় কলিকাতার সুবিখ্যাত 'অনন্যা অপেরা' পরিবেশন করেন এক অশ্রুসিক্ত সামাজিক যাত্রাপালা 'আগুনের গোলায় অগ্নিকন্যা'। যাত্রা পালাটি উপস্থিত যাত্রা পিপাসু দর্শকদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।
ইংরেজির ২৯ মার্চ শনিবার সকাল ৯ টায় যথারীতি শুরু হয় গীতা পাঠ। অপরাহ্নে ২ ঘটিকায় নৃত্য প্রতিযোগিতা। রাত্রি ৭ টায় পরিবেশিত হয় বাউল গান। বাউল গান পরিবেশন করেছিল 'নদিয়া ফোক ব্যান্ড'।
সমাপ্তি দিন ইংরেজির ৩০ শে মার্চ, রবিবার, সকাল ৭ টায় মূলমঞ্চে তারক ব্রহ্ম নামের বিশ্রাম। সকাল ৯ টায় গীতা পাঠ। বেলা ১০টায় পরিবেশিত হয় পসরা গান। পরিবেশন করেছিলেন 'বিষ্ণুপ্রিয়া কীর্তন সম্প্রদায়' কাঁটাখালি, (নাঙ্গল কাটা)। দুপুর ১২টায় পাঁচ হাজার ভক্ত মহাপ্রভুর মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন।
পাঁচ দিনের এই শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহামিলন উৎসবের সমাপ্তির শেষ লগ্নে সমস্ত ভগবৎ প্রেমী ভক্তদের কন্ঠে উচ্চারিত হয় 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম নিতাই গৌর রাধে শ্যাম'। এই নামগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়।



-
প্রসাধন ও তাৎক্ষণিক জাদুবিদ্যা

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিগত ৯ই মার্চ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত বালি, হাওড়ায় প্রসাধন ও তাৎক্ষণিক জাদু দেখানো নিয়ে একটি মনোজ্ঞ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ম্যাজিক অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় প্রখ্যাত জাদুকর শ্যামল কুমার এ বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেন।
জাদুকর শ্যামল কুমার বলেন, অনেক জাদুকরই ম্যাজিক দেখাবার সময় প্রসাধন ব্যবহার করেন না। মেকআপ ছাড়াই ম্যাজিক দেখাতে মঞ্চে উঠে পরেন।
কিন্তু মেকআপ নিয়ে মঞ্চে উঠলে দর্শকদের চোখে একটা আলাদা ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। জাদুকরকে অনেক সুন্দর দেখতে লাগে। একই সঙ্গে সেই জাদুকরের দেখানো ম্যাজিক আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের অনেকেরই খুব একটা ভালো ধারণা নেই মেকআপ সম্বন্ধে।
ম্যাজিক অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ও বঙ্গ জাদুর কর্মশালাতে কিভাবে মেকআপ করলে আরও সুন্দর দেখতে লাগবে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে থেকেছেন বিশিষ্ট জাদুকর শ্যামল কুমার। শুধু মেকআপ নয় একজন জাদুকর কি ধরনের পোশাক পরলে তাকে আরও আকর্ষণীয় লাগবে, মঞ্চে সুন্দর ভাবে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া সেই সমস্ত ব্যাপারেই আলোচনা করা হয়। জাদুকর শ্যামল কুমারের তাসের ম্যাজিকের উপর দুইটি বই রয়েছে। প্রথম শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকলের উপযোগী করে লেখা। এই দিন অন্যান্য খেলার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর তাসের ম্যাজিক তিনি শেখান।
সঙ্গে ছিল তাৎক্ষণিক কি কি ম্যাজিক দেখানো যেতে পারে এবং সেই রকম বেশ কিছু ম্যাজিকের হাল হকিকত। সঙ্গে কোনো জাদু সরঞ্জাম না থাকলে, কেউ হঠাৎ করে ম্যাজিক দেখাতে বললে, আমরা খুব অপ্রস্তুত হয়ে যাই। এই পরিস্থিতিতে কী ধরনের ম্যাজিক দেখানো যেতে পারে তার বিস্তারিত আলোচনা ও হাতেকলমে সেগুলো দেখানো ও শেখানো হয়। জাদুকরেরা বিশেষকরে নতুন প্রজন্মের জাদুকরেরা এই কর্মশালায় প্রভূতভাবে উপকৃত হন।
যে সমস্ত শিক্ষার্থী জাদুকরেরা এদিনের কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সকলেই একযোগে এই উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। যারা যারা এই অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম অর্ধেন্দু রাণা, সীমা সরকার, শশাঙ্ক শেখর চ্যাটার্জী, রবীন্দ্রনাথ দাস, সঞ্জয় সেনগুপ্ত, পি কে শংকর, রানা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডক্টর সৌরভ চক্রবর্তী, কৃষ্ণ কুমার রায়, প্রভাত, কাঞ্চন দেবনাথ, আশীস মুখোপাধ্যায়, মানস দত্ত, ও দেবাশীষ সাহা রায়। আগামীদিনে এই ধরনের কর্মশালা আরও অনেক অনুষ্ঠিত হবে, উদ্যোক্তাদের তরফে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকেল ৬ টায় অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।




